দ্বাদশ বিশ্বকাপ এখন বাংলাদেশের কাছে দুঃস্মৃতি। সেই দুঃস্মৃতি ভুলতে আজ থেকে শ্রীলংকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নামছে মাশরাফি-সাকিববিহীন বাংলাদেশ দল। জয় দিয়ে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করার লক্ষ্য বাংলাদেশের।
কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বিকাল তিনটায় শুরু হবে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে।
২০১৫ সালের বিশ্বকাপে প্রথমবারের মত কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে বাংলাদেশ। এতে মাশরাফির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল টগবগে হয়ে উঠে। ওই বিশ্বকাপ শেষে দেশের মাটিতে টানা তিন সিরিজে ভারত-পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিধ্বস্ত করে মাশরাফির দল। এরপর থেকে সাফল্যে রঙ্গীন হতে থাকে বাংলাদেশের ক্রিকেট। সেটি আরও বেশি ঝলকানি দেয় ২০১৭ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে।
গ্রুপ পর্বে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মত দলকে পেছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে উঠে টাইগাররা। লিপিবদ্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে সাফল্য।
যে কারণে ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে খেলতে পারায় ২০১৯ বিশ্বকাপ নিয়ে বড় ধরনের স্বপ্নই দেখে বাংলাদেশ। স্বপ্ন ছিলো অন্তত সেমিফাইনাল খেলার। সেভাবেই শুরু হয়েছিলো যাত্রাটা। ইংল্যান্ডের ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার মত বিশ্বসেরা দলকে হারিয়ে চমক দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু হয় মাশরাফির দলের।
তবে পরের দু’ম্যাচে হার (নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড) ও একটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত (শ্রীলংকা) হওয়ায় নিজেদের লক্ষ্য নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায় বাংলাদেশ। তবে চিন্তা থেকে মুক্ত হতে খুব বেশি সময়ক্ষেপন করেনি টাইগাররা।
নিজেদের পঞ্চম ম্যাচেই চোখ জুড়ানো জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। টনটনে সাকিব আল হাসানের অপরাজিত ১২৪ ও লিটন দাসের অপরাজিত ৯৪ রানের সুবাদে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ছুঁড়ে দেয়া ৩২২ রানের টার্গেট স্পর্শ করে ফেলে বাংলাদেশ। তাই আবারো সেমিফাইনালে খেলার পথ খুঁজে পায় টাইগাররা।
তবে পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারলেও, আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় বাংলাদেশকে সেমিফাইনালের দৌঁড়ে টিকিয়ে রেখেছিলো। তবে বার্মিংহামে ভারতের কাছে ২৮ রানে হার বাংলাদেশকে স্বপ্নকে দুমড়ে-মুচড়ে দেয়।
সেমিফাইনালে যাবার সব পথ বন্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশের। আর লিগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হেরে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করে বাংলাদেশ। ফলে ৯ খেলায় ৩ জয়, ৫টি হার ও ১টি পরিত্যক্ত ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে দ্বাদশ বিশ্বকাপ টেবিলের অষ্টম স্থান পায় বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলতে না পারার ব্যর্থতার সাথে দশ দলের মধ্যে অষ্টম হওয়ায় ক্ষত-বিক্ষত হয় বাংলাদেশ। সেই আঘাত সহজেই মুছে ফেলার কোন উপায় নেই বললেই চলে। তারপরও ২০২৩ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে নতুনভাবে, নতুন পরিকল্পনায় পথচলা শুরু করছে বাংলাদেশ।
নিজেদের বিশ্বকাপ শেষ করার ২১তম দিনেই মাঠে নামছে বাংলাদেশ। তবে দলের দুই সেরা খেলোয়াড় নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা-অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে ছাড়া। ইনজুরির কারণে ওয়ানডে সিরিজ থেকে ছিটকে পড়েন মাশরাফি। শ্রীলংকা সফরে রওনা দেয়ার আগের দিন বিকেলে সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন ম্যাশ।
সংবাদ সম্মেলন শেষে অনুশীলনে নামেন তিনি। শ্রীলংকায় তিনটি ওয়ানডে দিবা-রাত্রিতে হওয়াতে ঐদিন বাংলাদেশের শেষ অনুশীলন পর্ব ছিলো ফ্লাড লাইটের নীচে। ঐ অনুশীলনে বোলিং করতে গিয়ে হ্যামষ্ট্রিং-এ চোট পান। এই চোট নিয়ে বিশ্বকাপে বেশক’টি ম্যাচও খেলেছিলেন ম্যাশ। তারপরও দলের প্রয়োজনে নিজেকে বিশ্রামে রাখেননি মাশরাফি। বিশ্বকাপে নিজেকে বিশ্রামে না রাখলেও, শ্রীলংকা সফর থেকে বাধ্য হলেন ছিটকে যেতে।
আর বিশ্বকাপে অসাধারণ পারফরমেন্স করা সাকিব ব্যক্তিগত কারণে ওয়ানডে সিরিজ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন। বিশ্বকাপের ধকল কাটিয়ে উঠতে বিশ্রামে আছেন সাকিব। বেশি করে পরিবারকে সময় দিচ্ছেন এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
তাই মাশরাফি-সাকিব না থাকায় দলের অধিনায়কত্ব পেয়েছেন ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল। এর আগে ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। কারণ ঐ সিরিজের প্রথম টেস্টে ইনজুরিতে পড়েছিলেন মুশফিকুর রহিম।
তাই দ্বিতীয় টেস্টে নেতৃত্ব দিতে হয় তামিমকে। আড়াই বছর পর আবারো দলের ভার সামলাতে প্রস্তুত তামিম। এবারও সেই পুরনো চিত্র। মাশরাফির ইনজুরি ও সাকিবের অনুপস্থিতি সুযোগ করে দিলো তামিমকে অধিনায়কত্ব করার।
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ আওয়ার